সুমন খান :
দুর্নীতির দুর্গে পরিণত সরকারি অফিস
রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় অবস্থিত বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) অফিস আজ যেন দুর্নীতির এক অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।স্থানীয় সূত্র, ভুক্তভোগী গাড়ি মালিক এবং অফিস-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির অভিযোগে উঠে এসেছে— উচ্চমান সহকারী আশিকুর রহমান এবং মোটরযান পরিদর্শক কাউসার আলম-এর নেতৃত্বে চলছে এক বিশাল ঘুষ বাণিজ্যের সিন্ডিকেট।
অভিযোগ রয়েছে, রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে ফিটনেস, লাইসেন্স নবায়ন, নাম ট্রান্সফার কোনো কাজই এখানে ঘুষ ছাড়া হয় না।প্রতিটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট ট্যারিফ ঠিক করে দিয়েছে একদল দালাল, যারা অফিসের ভেতরেই ঘুরে বেড়ায় দিনের পর দিন।ঘুষের রেট লিস্ট (অভিযোগ অনুযায়ী)সেবা অভিযোগকৃত ঘুষের অঙ্করেজিস্ট্রেশন ক্লিয়ারেন্স৫,০০০ – ১০,০০০ টাকা ফিটনেস নবায়ন ২,০০০ – ৩,০০০ টাকা নাম ট্রান্সফার ৮,০০০ – ১২,০০০ টাকাএই ঘুষের টাকা ওঠানো হয় অফিসের ভেতরে দালালদের মাধ্যমে।অভিযোগ অনুসারে, সংগৃহীত টাকার বড় অংশ যায় আশিকুর রহমান ও কাউসার আলমের পকেটে।তারা নাকি খোলামেলাভাবে বলে বেড়ান আমরা একা খাই না, উপরে হেড অফিস পর্যন্ত যায়!সাংবাদিকের ওপর হামলা ও আবার সাংবাদিককেই বলেন আপনারা হলেন ভুয়া সাংবাদিক বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে একজন সাংবাদিক বিআরটিএ উত্তরা অফিসে গেলে, অফিসের ভেতরেই সাংবাদিকের ওপর শারীরিক হামলা চালানো হয়।তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া ও ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয় বলে অভিযোগ।আরও চমকপ্রদ বিষয়— পরে উল্টো ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে, ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে।স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলছে,যারা সরকারি দপ্তরের ছায়ায় দুর্নীতি করছে, সাংবাদিক পেটাচ্ছে— তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে জনগণের আস্থা ধ্বংস হবে।আশিকুর রহমান: বিতর্কিত প্রভাবশালী কর্মকর্তা?সূত্র বলছে, আশিকুর রহমান নিজেকে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে পরিচিত করেন।অভিযোগ রয়েছে— তিনি মিরপুর ১২ নম্বরে দুটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন এবং পাঁচ বছর ধরে একই জায়গায় একই পদে বহাল রয়েছেন।প্রশ্ন উঠেছে— সরকারি বদলি নীতিমালা অনুযায়ী এত বছর একই স্থানে থাকা কীভাবে সম্ভব?অভিযোগ আরও আছে, তিনি রাজনৈতিক প্রভাব ও অর্থবিত্ত ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে নিজের অবস্থান পোক্ত করে রেখেছেন।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, “আশিকুর রহমানই দিয়াবাড়ি অফিসের আসল ক্ষমতার অধিপতি।কাউসার আলম: মাঠ পর্যায়ের রাজা অন্যদিকে, মোটরযান পরিদর্শক কাউসার আলম মাঠ পর্যায়ে আশিকুরের ডানহাত হিসেবে কাজ করেন বলে অভিযোগ।তার নির্দেশেই দালালদের মাধ্যমে টাকা তোলা হয়, গাড়ির ফাইল আটকে রাখা হয়,এবং টাকা না দিলে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হয় বলে বহু ভুক্তভোগীর অভিযোগ। ভুক্তভোগীদের কণ্ঠ এক গাড়ি মালিক জানান,
বিআরটিএ অফিসে গেলে সবাই জানে কাকে কত টাকা দিতে হবে। কেউ প্রতিবাদ করলে ফাইল আটকে দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন,এখানে কাজ করতে গেলে ‘নিয়ম নয়’, মানুষ চেনে কাকে কত দিতে হবে — এটাই নিয়ম! দালাল চক্রের সক্রিয়তা
অভিযোগে উঠে এসেছে — জাকির, রনি, বাপ্পি, রতন, জীবন ও শাহিনসহ আরও অন্তত ১০ জন দালাল প্রতিদিন অফিসে অবস্থান করেন।তারা খোলা আয়োজনে ঘুষের লেনদেন করেন, এমনকি নতুন দালালদের প্রশিক্ষণও দেন।দালালদের একাংশ স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় রয়েছে বলে অভিযোগ। প্রশাসনের নীরবতা — কেন?দীর্ঘদিন ধরে চলা এই দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে বিআরটিএ প্রশাসন এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।
বরং অভিযোগ উঠেছে কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এই দুর্নীতির অংশীদার, ফলে নিচের পর্যায়ের কর্মকর্তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।জনগণের প্রশ্ন: বিআরটিএ কি জনগণের অফিস, না কিছু কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ব্যবসাকেন্দ্র? সাংবাদিক সমাজ ওমানবাধিকার সংগঠনের দাবি অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন সাংবাদিকের ওপর হামলার বিচার দালালচক্র ও ঘুষ নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলা অফিসে সিসিটিভি ও অভিযোগ বক্স বাধ্যতামূলক করা জনগণের দাবি:
জনগণ ও পরিবহন মালিকদের দাবি—
সরকার যেন অবিলম্বে এই দুই কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং দুর্নীতি ও সাংবাদিক নিপীড়নের দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে।
Leave a Reply