সুমন খান:
রাজধানীর প্রশাসনিক হৃদয় আগারগাঁও— যেখানে অবস্থিত প্রধান দপ্তরগুলো, সরকারি অফিস, পাসপোর্ট ভবন, আইসিটি টাওয়ার— এখন ফুটপাত দখল ও অবৈধ ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে এক বিশৃঙ্খল বাজারে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফুটপাত জুড়ে গড়ে উঠেছে হকারদের স্থায়ী আস্তানা।
জুতা, পোশাক, কেক, খাবার, ইলেকট্রনিক পণ্য— সবই বিক্রি হচ্ছে রাস্তা আটকে। বিশেষ করে জাকির নামে এক কেক ব্যবসায়ী পুরো রাস্তা দখল করে কেক বিক্রি করে চলেছেন প্রতিদিন। তার দোকানের চারপাশে জমে থাকা ভিড় ও যানজটে জনজীবন হয়ে পড়ছে স্থবির। স্থানীয়রা বলছেন, “জাকির ভাই কেক বিক্রি করেন, কিন্তু রাস্তা তার দোকান হয়ে গেছে। আমরা হাঁটব কোথায়?”
ফুটপাত এখন ব্যবসার মাঠ:
আগারগাঁওয়ের বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, অফিসগামী মানুষ, স্কুলের শিক্ষার্থী, নারী ও বৃদ্ধরা ফুটপাত ব্যবহার করতে না পেরে বাধ্য হচ্ছেন মূল সড়কে নামতে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়েছে।
একজন পথচারী বলেন, “আগারগাঁওয়ের ফুটপাত এখন বাজার, দোকানদার আর ক্রেতায় ভর্তি। আমরা পথচারী, যেন অনাহুত অতিথি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কিছু অসাধু ব্যক্তি প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে হকারদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করছে। উচ্ছেদ অভিযান চালালেও অল্প সময়ের মধ্যেই আবার ফুটপাত পুনর্দখল হয়ে যায়।
একজন হকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “চাঁদা না দিলে বসতে পারি না। আমাদেরও পরিবার আছে, তাই বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়।
ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “ফুটপাত দখল শুধু চলাচল নয়, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণেও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। আগারগাঁও মেট্রো স্টেশন, আইসিটি টাওয়ার ও পাসপোর্ট অফিসের সামনে চলাচল করাই এখন দুর্ভোগ।
শহর পরিকল্পনাবিদদের মতে, ফুটপাত শুধুমাত্র পথচারীদের জন্য নির্ধারিত, ব্যবসার জন্য নয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অঞ্চল আগারগাঁও আজ দখলবাজদের হাতে বন্দি। পথচারীরা যেন নিজেদের শহরে পরবাসী।
এখনই সমন্বিত উদ্যোগ ও কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে “ফুটপাত মানেই বাজার”—এই ধারণা ঢাকাবাসীর মনে স্থায়ীভাবে গেঁথে যাবে।
Leave a Reply